Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পানিকচু বাণিজ্যিক চাষাবাদ প্রযুক্তি

সবজি হিসেবে বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কচুর ব্যবহার বেশ পুরনো। ধারণা করা হয় প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চল, শ্রীলংকা, সুমাত্রা ও মালয় অঞ্চল কচুর উৎপত্তিস্থল। বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ধর্মীয় আচার ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে কচুর ব্যবহার অতি প্রাচীন। সুদীর্ঘকাল ধরে সবজি ও ভেষজ হিসেবে কচু ব্যবহৃত হচ্ছে। কচুতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, লৌহ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে।


সাধারণত যে কচু স্বল্প পানিতে চাষ করা যায় তাকে পানিকচু বলা হয়। আমাদের দেশে স্থান ভেদে পানিকচুর নাম ভিন্ন যেমন নারকেলি কচু, শোলা কচু, জাত কচু, বাঁশকচু, কাঠকচু ইত্যাদি। তবে পানি কচু নামেই সর্বাধিক পরিচিত। পানিকচুর লতি ও কাণ্ড সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্ষার শেষে যখন বাজারে সবজির ঘাটতি দেখা দেয় তখন জুন-সেপ্টেম্বর মাসের বাজারে পানি কচুর লতি ও কাÐ বেশ জনপ্রিয়।

 
পানিকচুর জাত
বারি পানিকচু -১ (লতিরাজ)
এ জাতে কাণ্ড অপেক্ষা লতির প্রাধান্য বেশি। জীবনকাল  ১৮০-২৭০ দিন। রোপণের ২ মাস পর থেকে ৭ মাস পর্যন্ত লতি হয়ে থাকে। হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন লতি এবং ১৫-২০ টন কাণ্ড উৎপন্ন হয়। লতি সমানভাবে সিদ্ধ হয়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম থাকায় গলা চুলকায় না।
বারি পানিকচু -২
লতি প্রধান ভক্ষণযোগ্য অংশ। উৎপাদিত লতির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ মিটার। লতি গোলাকার, অপেক্ষাকৃত মোটা ও গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন লতি এবং ১৮-২২ টন কাণ্ড উৎপন্ন হয়। লতি সমানভাবে সিদ্ধ হয়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম থাকায় গলা চুলকায় না।
বারি পানিকচু -৩
কাণ্ড প্রধান ভক্ষণযোগ্য অংশ। হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন কাণ্ড এবং ১০-১২ টন লতি উৎপন্ন হয়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম থাকায় গলা চুলকায় না।
বারি পানিকচু -৪
অবমুক্তের বছর ২০১৩। মূলত রাইজোম প্রধান ভক্ষণযোগ্য অংশ তবে স্বল্প পরিসরে লতিও হয়। কাÐ মোটা ও গোলাপি বর্ণের। রাইজোম গোলাপি বর্ণের ও ফ্লেস হালকা গোলাপি যা এ জাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।  হেক্টর প্রতি ৩৫-৪৫ টন কাণ্ড এবং ৫-৮ টন লতি উৎপন্ন হয়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম থাকায় গলা চুলকায় না।
বারি পানিকচু -৫
রাইজোম প্রধান ভক্ষণযোগ্য অংশ। কাণ্ড মোটা ও সবুজ বর্ণের। রাইজোম হালকা সবুজ বর্ণের ও ফ্লেস হালকা সাদাটে। হেক্টর প্রতি ৩৫-৪০ টন কাণ্ড এবং ৫-৮ টন লতি উৎপন্ন হয়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম থাকায় গলা চুলকায় না।
বারি পানিকচু -৬
এর রাইজোম লম্বায় প্রায় ১ মিটার ও বেড়ে ৩০-৩৫ সেমি যার বর্ণ হালকা সবুজ। শাঁস আকর্ষণীয় সাদা। রাইজোমই প্রধান ফসল। হেক্টর প্রতি ৮০-৯০ টন কাণ্ড এবং ৬-৭ টন লতি উৎপন্ন হয়।
বপন ও রোপণের সময়
আগাম ফসলের জন্য কার্তিক ও নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ মাসে লাগানো যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য অগ্রহায়ণ-পৌষ মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। হেক্টর প্রতি সাধারণত ৩৭-৩৮ হাজার চারার প্রয়োজন হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সে.মি.।
পানি কচুর চারা রোপণের আগে এর সমস্ত পাতা, শিকড় ও কাণ্ডে তলার কিছু অংশ কেটে ফেলতে হবে। এতে করে চারা দ্রুত মাটিতে লেগে যায়। জমি কাদাময় না হলে রোপণের পর পরই জল সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। যে সব জায়গা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে সেখানে কার্তিক মাসেই চারা লাগানো ভালো  এতে বর্ষার পানিতে তলিয়ে যাবার আগেই ফসল তোলা যায়।
মাটি
পলি দোঁআশ ও এঁটেল মাটি পানিকচু চাষের উপযোগী। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে পানি কচু লাগালে বন্যার ভয় থাকে না। তবে জমিতে যাতে সব সময়ই কিছু পানি থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। পানি কচুর গোড়ায় দাঁড়ানো পানির গভীরতা ৮-১০ সে.মি. এর বেশি হলে ফলন কমে যায় এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে হয়। বর্ষাকালে পানির পরিমাণ ৮-১০ সে.মি. এর বেশি হলে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে ফেলতে হয়।
সার ব্যবস্থাপনা
পানি কচু চাষে সার প্রয়োগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে । বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট অনুমোদিত
সারের মাত্রা হলো -
*এলাকা ভেদে প্রয়োজনানুসারে।
গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড ও অর্ধেক এমওপি সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে অর্ধেক এমওপি ও এক ষষ্টাংশ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি পাঁচ ভাগ ইউরিয়া সমান কিস্তিতে ১৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমন ব্যবস্থাপনা
পোকামাকড় : পোকামাকড়ের মধ্যে লেদা পোকা, লাল মাকড় ও জাব পোকা প্রধান।
লেদা পোকা : পূর্ণ বয়স্ক মথ পাতার নিচে গুচ্ছাকারে ডিম পাড়ে। কীড়া প্রাথমিক পর্যায়ে সবুজ বর্ণের ও মাথা কালো। এ পোকা প্রতিকারের জন্য হাত দিয়ে ডিম ও কীড়া সংগ্রহ করে নষ্ট করা যেতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত   বালাইনাশক যেমন ট্রেসার ৪৫ এসসি প্রতি লিটার পানিতে  মিশিয়ে ০.৪ মিলি. প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কচুর লাল মাকড় :  পাতার নিচে লাল রংয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। এদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না। পূর্ণ বয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই গাছের ক্ষতি করে। অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন ভার্টিমেক ১.৮ ইসি ১.৮ মিলি/লি: মাত্রায় প্রয়োগ করে এটি দমন করা যায়।
জাবপোকা : জাবপোকা কচু থেকে রস শোষণ করে এবং ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে ফসলের ক্ষতি করে। এই পোকা পাতার রস শোষণ করে ও ক্লোরফিলের পরিমাণ হ্রাস করে। পোকা দমনের জন্য এডমায়ার ১০০ এসপি ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে  প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ :
পাতা ঝলসানো রোগ : এর আক্রমণে পাতা ও করম পচে যায়। জুলাই-সেপ্টেম্বরে এ রোগ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত পাতায় প্রথমে ছোট কালো দাগ দেখা যায় যা পরবর্তীতে হলুদ প্রান্তযুক্ত বাদামি বর্ণে পরিণত হয়। দাগগুলো একত্রিত হয়ে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ গাছ ও পাতা পুড়ে যায়। কাÐ পচে যায়। রোগের অন্যতম উৎস বীজ হওয়ায় রোগ দমনের জন্য রোগমুক্ত এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। রোগ দেখা মাত্রই অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন সিকিউর বা রিডোমিল্ড গোল্ড ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
পাতায় দাগ পড়া বা লিফ স্পট : ছত্রাক জনিত রোগ। কচু পাতায় শুকনো ও মাঝারি আকারের দাগ পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে সম্পূর্ণ গাছই পুড়ে যেতে পারে। ফলে ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। সুস্থ, সবল রোগমুক্ত চারা রোপণ ও শস্য পর্যায় অনুসরন এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।  আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন টিল্ট ০.৫ মিলি/লিটার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গোড়া পচা রোগ : ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের আক্রমণে গাছের গোড়ায় ছত্রাকের সাদা মাইসেলিয়াম দেখা যায়। পরবর্তীতে আক্রান্ত গাছটি সম্পূর্ণ রূপে হলুদ হয়ে ঢলে পড়ে যায়।  রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগ মুক্ত এলাকা হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। জমির পানি সরিয়ে অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন বেভিস্টিন ১ গ্রাম/ লিটার মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। বালাইনাশক প্রয়োগের এক দিন পর জমিতে আবার পানি দেওয়া যাবে।

রাইজম পচা রোগ : ছত্রাক জনিত এ রোগের আক্রমণে অল্প বয়স্ক গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গাছ মারাও যেতে পারে। অধিক আক্রমণে গাছের কাÐ পচে যায়। রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত এলাকা হতে বীজ সংগ্রহ, শস্য আর্বতন, পরিষ্কার চাষাবাদ ইত্যাদি অনুসরণ করতে হবে। বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জমির পানি সরিয়ে অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন রিডোমিল্ড গোল্ড ২ গ্রাম/লিটার মাত্রা দিয়ে ফসলের গোড়ার মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

কচুপাতায় ছত্রাক বা কীটনাশক প্রয়োগের সময় ডিটারজেন্ট বা সাবান গুড়ো ২০ গ্রাম/১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। নতুবা বালাইনাশক গড়িয়ে পড়ে যাবে।
পানিকচু দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এখনও এটি অবহেলিত সবজি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর বাণিজ্যিক চাষাবাদের প্রতি দেশের সব অঞ্চলে সমান আগ্রহ তৈরি হয়নি। অথচ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত কচুর লতি স্বল্প পরিমানে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে তা পুষ্টি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আবু কাউসার মোঃ সারোয়ার
আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, চট্টগ্রাম, ফোন : ০৩১৭২১১৭৪, ই-মেইল : Chittagong@ais.gov.bd

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon